বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩০ অপরাহ্ন
কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে টিএফআই ও জেআইসি সেলে গুম-খুন এবং জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত গুমসহ তিনটি পৃথক মামলায় হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
আজ বুধবার (২১ অক্টোবর) সকাল সোয়া ৭টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজনভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ সদস্যরা তাদের ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে যান।
হাজির হওয়া সেনা কর্মকর্তারা হলেন: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, মেজর জেনারেল মোস্তফা সরোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, কর্নেল মশিউল রহমান জুয়েল, লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহম্মেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, লে. কর্নেল মখচুরুল হক (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার এবং কর্নেল কেএম আজাদ।
এই তিন মামলায় সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে মোট ২৫ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৩২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজকের দিনই তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য নির্ধারিত ছিল। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগের শুনানিও আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে অভিযোগের শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সেনা কর্মকর্তাদের হাজিরাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ একাধিক এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। ট্রাইব্যুনাল সংলগ্ন হাইকোর্ট মাজার গেট এলাকাতেও ভোর থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানান, হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের আজ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের দিন ধার্য ছিল। তারা না এলে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হাজিরা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হতো। আর হাজির হলে, ট্রাইব্যুনাল যদি তাদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেয়, তাহলে কোন কারাগারে রাখা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন কারা কর্তৃপক্ষ।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষদের গুম করে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে গোপন বন্দিশালায় রেখে নির্যাতনের অভিযোগে শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এই অভিযোগ ৮ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়। এরপর শুনানি শেষে অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এবং আজকের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেন বিচারপতি মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন প্যানেল।
একই দিনে, জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) বা আয়নাঘরে গুমের অভিযোগে দায়ের করা আরেকটি মামলায় শেখ হাসিনা ও তারেক রহমানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি হয়।
এ ছাড়া জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় বিজিবির কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করে প্রসিকিউশন।
এই তিন মামলায় মোট ২৫ সেনা কর্মকর্তা অভিযুক্ত। সেনা সদর থেকে জানানো হয়, ৯ অক্টোবর ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর তা আমলে নেওয়ার শুনানি শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার শুরুর আবেদন জানান। শুনানি শেষে অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এবং আজকের মধ্যে তাদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।